এলিয়েন দ্বীপ সুকাত্রা
পৃথিবীর বুকে এখনো যে অনেক রহস্যময় এবং অদ্ভুত জায়গা রয়েছে তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তেমনি আজব বা রহস্যময় একটি জায়গার নাম সুকাত্রা দ্বীপ। এখানে তেমন কোনো আজব ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি, তবে দ্বীপটি নিজেই যেন অপার্থিব রহস্যে ভরপুর। এখানকার জীবজগৎ, প্রাণীকুল কোন কিছুর সাথেই পৃথিবীর অন্য কোন স্থানের কোন মিল নেই। যেমন অদ্ভুত দর্শনের গাছপালা এখানে, তেমনিই অদ্ভুত এখানকার পশুপাখি। এখানকার সবকিছু এত অদ্ভূত দর্শনের যে এই দ্বীপকে ভিনগ্রহের কোনো জায়গা বললে মোটেই ভুল হবে না। আরব সাগরের মাঝে এমনই এক দ্বীপ রয়েছে যেখানে এলিয়েনদের দেখা না মিললেও ভৌগোলিক পরিবেশ এবং গাছপালার ভিন্নতার কারণে একে এলিয়েন দ্বীপ বলা হয়।
আরব সাগরের
বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা সুকাত্রা একটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। যদিও সুকাত্রাকে একটি দ্বীপ বললে ভুল হবে, কারণ এটি গোয়ার্ডাফুই চ্যানেল এবং
আরব সাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ, যা মোট ৪টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত।
এগুলোর মধ্যে সুকাত্রাই সবচেয়ে বড় এবং এটি মোট স্থলভাগের
মোট ৯৫ শতাংশই দখলে রেখেছে। দ্বীপটি হর্ন অভ আফ্রিকা থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার
পূবে আর আরব উপদ্বীপের ৩৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। ৩,৭৯৬ বর্গকিলোমিার আয়তন
বিশিষ্ট সুকাত্রা দ্বীপের দৈর্ঘ্য ১৩২ কিলোমিটার, আর প্রস্থ প্রায় ৫০ কিলোমিটার। মজার
ব্যাপার হলো রাজনৈতিকভাবে দ্বীপটি ইয়েমেনের অংশ, কিন্তু সুকাত্রাসহ অন্য দ্বীপগুলো
ভৌগোলিকভাবে আফ্রিকা মহাদেশের অংশ। যে কারণে ইয়েমেন দেশটি দুটি মহাদেশের মধ্যে
অবস্থিত একটি দেশ হিসেবে গন্য হয়। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো ওয়াল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোসণা
করে সুকাত্রা দ্বীপকে।
আগেই বলেছি এটি পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপপুঞ্জ। এই দ্বীপপুঞ্জ
এক সময় গন্ডোওয়ানা নামে একটি সুপার কন্টিনেন্টের অংশ ছিলো। মায়োসিন যুগে অর্থাত
বেশ কয়েক লাখ বছর আগে এটি গন্ডোওয়ানা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তারপর থেকে এখন
পর্যন্ত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ হিসেবেই দাড়িয়ে আছে। চারটি দ্বীপের সবচেয়ে বড়
টি হলো সুকাত্রা, বাকী তিনটি হলো আব্দ আল কুরি, সামহা এবং দার্সা। এই দ্বীপগুলো
ছাড়াও সমুদ্রের বুকে মাথা তুলে রাখা কিছু ছোটো ছোটো পাথুড়ে ভূমি আছে যেগুলো মূলত
সামুদ্রিক পাখিদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কয়েকটি প্রধান সামুদ্রিক বাণিজ্য
রুটের পাশে অবস্থিত হওয়ায় এই দ্বীপপুঞ্জটি ভৌগোলিকভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে
২০০৪ সালের আগ পর্যন্ত এটি ইয়েমেনের এডেন প্রদেশের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। এরপরে এটি
দেশটির হাদরামাউত প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। সবশেষ ২০১৩ সালে সুকাত্রাকে একটি
প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করে ইয়েমেন। সুকাত্রার রাজধানীর নাম হাদিবু। এটিই এখানকার
সবচেয়ে বড় শহর। বর্তমানে এই দ্বীপে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বাস রয়েছে।
সুকাত্রা
দ্বীপটির নামকরণ নিয়ে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। গবেষকদের মতে, সুকাত্রা নামটির উতপত্তি
গ্রিক শব্দ থেকে যা একটি প্রাচীন আরবি ভাষা থেকে উদ্ভুত হয়েছে। ১ হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দ
থেকে ৬ষ্ঠ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইয়েমেনের কিছু উপজাতির মধ্যে প্রচলিত প্রাচীন দক্ষিন
আরবীয় ভাষা থেকেই এসেছে এই নামটি। তবে অনেকেই মনে করেন এটি গ্রিক শব্দ নয় বরং সংস্কৃত শব্দ সুখাদ্রা থেকে এর উৎপত্তি, যার
অর্থ সুখ প্রদানকারক। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে জানা যায় প্রাচীন কালে সুকাত্রা
দ্বীপে ওল্ডোওয়ান লিথিক সংস্কৃতির মানুষের বাস ছিলো। ২০০৮ সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা হাদিবু
শহরের কাছে এমন কিছু পাথরের হাতিয়ার খুজে পান যা ২৬ লাখ থেকে ১৭ লাখ বছর আগে পালিওলিথিক
যুগের প্রাগৈতিহাসিক মানুষরা ব্যবহার করতো। এরপর খ্রিস্টিয় প্রথম
শতকে যে গ্রিকদের পদচারণা হয়েছিলো এই সুকাত্রা দ্বীপমালায় তা জানা যায় গ্রিকদের
এরিথ্রিয়ান সাগরে নৌচালনা বিষয়ে লেখা একটি বই থেকে। তবে
সাম্প্রতিক সময়ে এখানে খুজে পাওয়া একটি কাঠের খন্ডে পালমিরিয় ভাষায় লেখা কিছু তথ্য
থেকে জানা যায় তৃতীয় শতকের দিকে, এই দ্বীপটি প্রাচীন যুগের
ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিলো।
২০০১ সালে বেলজিয়ামের একদল স্পেলিওলজিস্ট বা প্রাচীন গুহাবিশেষজ্ঞ সুকাত্রা
দ্বীপের একটি গুহা থেকে বেশ কিছু পাথরের ফলক, চিত্রকর্ম এবং প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু
খুজে পান। পরে গবেষকরা জানান, সেগুলো প্রথম খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর
মধ্যবর্তী সময়ে আরব সাগর পাড়ি দেয়া জাহাজের নাবিক যারা এই দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন তারাই
এগুলো ফেলে গিয়েছিলেন। শুনলে অবাক হতে পারেন, প্রস্তরখন্ডে পাওয়া লেখাগুলোর ভেতরে বেশিরভাগই
ভারতীয় ব্রাহ্মলিপিতে রচিত। তবে দক্ষিণ আরবীয়, ইথিওপিক, গ্রীক, পালমিরিয় এবং ব্যাক্ট্রিয়ান
লিপিও রয়েছে এগুলোর মধ্যে। প্রায় আড়াইশটি গ্রন্থ এবং ড্রইং এর নমুনা পরীক্ষা করে
গবেষকরা জানান ভারত সাগর দিয়েই সেসময় পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য
পরিচালিত হতো।
সুকাত্রা
দ্বীপটিতে মূলত উষ্ণ মরু আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায়। এখানকার গড়
তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে বছরে খুব কমই বৃষ্টিপাত হয় তবে তা কোনো
নির্দিষ্ট সময়ে না হয়ে বছর জুড়েই হয়ে থাকে। তবে উত্তর-পূর্ব বর্ষা মৌসুম অর্থাত অক্টোবর
থেকে ডিসেম্বরে এখানে গড়ে ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। আর জুন থেকে
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম বর্ষা মৌসুমে দমকা বাতাসের কারণে এখানকার সমুদ্র
ভীষণ উত্তাল থাকে। ঢেউ ভাঙ্গার প্রচন্ড শব্দের কারণে শত শত বছর ধরেই এই সময়টা
ভারতীয় নাবিকদের মাঝে এখানকার সমুদ্র সুকত্রার সিংহ বলে পরিচিত পেয়েছে। যেমনটা
আগেই বলা হয়েছে, কয়েক লাখ বছর ধরে সুকাত্রা দ্বীপ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। যে
কারণে এখানে জন্মানো উদ্ভিদ বা প্রাণীকুল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এবং ব্যতিক্রমি
চেহারা পেয়েছে। দ্বীপটিকে এলিয়েন দ্বীপ বলার পেছনে মূল কারণ হলো এখানকার গাছপালা।
এই দ্বীপে যেসব গাছপালা আর উদ্ভিদ রয়েছে তা নামে যেমন অদ্ভূত দেখতেও তাই। দ্বীপের
বেশির উদ্ভিদই স্থানীয় অর্থাত পৃথিবীর অন্য কোথাও এসব উদ্ভিদের দেখা মিলবে না।
১৯৯০ সালে জীববিজ্ঞানীদের জরিপে পৃথিবীতে প্রায় ৭শ প্রজাতির স্থানীয় উদ্ভিদের খোজ
পাওয়া গেছে। আর সুকাত্রা দ্বীপের ৮২৫ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩০৭ প্রজাতিই
স্থানীয়, অর্থাৎ এখানে জন্মানো প্রায় ৩৭ শতাংশ উদ্ভিদের দেখা মিলবে না পৃথিবীর অন্য
কোথাও।
এই দ্বীপের সবচেয়ে অদ্ভুত গাছগুলোর একটি হলো ড্রাগন ব্লাড ট্রি। হঠাৎ করে
দেখলে এই গাছকে বিশাল আকৃতির ব্যাঙের ছাতা ভেবে ভয় পেত পারেন। দ্বীপের শুকনো
মাটিতে জন্মানো এই গাছটি প্রায় ৩২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। গাছের কান্ড উপরের
দিকে বৃদ্ধি পেতে পেতে অসংখ্য ডালপালায় ভাগ হয়ে যায়। ডালগুলোর ঘন পাতার কারণেই গাছটি
দেখতে অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো। ছাতা আকৃতির এই গাছটির কান্ড থেকে লাল বর্ণের এক
ধরনের আঠালো পদার্থ বের হয়। কথিত আছে বহুকাল আগে ড্রাগনের রক্ত থেকে এই গাছের
উৎপত্তি হয়েছিলো আর সে কারণেই গাছটির নাম হয়ে গেছে ড্রাগন ব্লাড ট্রি। এ গাছের আঠা
রঙ তৈরী আর বার্নিশের কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। ভেষজ গুণাগণও রয়েছে
এর। প্রাচীন কালে এই গাছের আঠা ওষুধ এবং প্রসাধনী হিসেবেও ব্যবহার করা হতো। বছরে
একবার এগাছে ফুল ফোটে। উপযুক্ত পরিবেশে গাছটি বেচে থাকতে পারে কয়েকশ বছর।
এতো গেলো ব্যাঙের ছাতা আকৃতির গাছের কথা। আরেকটি অদ্ভুত উদ্ভিদ হলো ডেন্ড্রোসসিয়াস।
মূলত এটি হচ্ছে এক প্রকারের প্রকান্ড শশা গাছ এবং একমাত্র শশার জাত যা গাছের আকৃতি
লাভ করে। বিভিন্ন আকৃতির কান্ডটি লম্বা হয়ে চূড়া তৈরী করে। ডেন্ড্রোসসিয়াস মূলত উভলিঙ্গ
গাছ অর্থাত একই গাছে পুরুষ এবং স্ত্রী ফুল ফোটে। ফুলের রং হয়ে থাকে হলদে কমলা রঙের।
এই গাছের জন্মানো এবং বংশবিস্তারের জন্য ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার
আবহাওয়া প্রয়োজন হয়। গবেষকদের মতে, এই গাছটির উতপত্তি হয়েছিলো দ্বীপটি বিচ্ছিন্ন
হওয়ারও দ্বিগুণ সময় আগে।
এই দুটি ছাড়াও এখানে দেখা মিলবে সুকাত্রা পোমেগ্র্যানেট নামে এক প্রকার
ফুলেল উদ্ভিদের। এটি আড়াই থেকে চার মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। সাধারণত ডিসেম্বর থেকে
জানুয়ারি মাসে গাছটিতে ফুল ও ফল হয়। ফুলগুলো গোলাপি বা লালের কাছাকাছি রঙের হয়, আর
ফলগুলো হয় অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির। পাকলে তা হলদে-সবুজ রঙ ধারণ করে। এই ফল মূলত
ক্ষতের চিকিতসায় ব্যবহার করা হয়। তবে এই গাছের কাঠ খুব শক্ত হয় এবং ছোটখাট
আসবাবপত্র তৈরীতে ব্যবহার হয়ে আসছে অনেক দিন ধরেই। এইসব ব্যতিক্রমী গড়নের উদ্ভিদের
জন্যই দ্বীপটিকে ভিনগ্রহের দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করার মূল কারণ। তবে দ্বিপটিতে
মানুষের বসবাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই ধারা
চলতে থাকলে অচিরেই অনেক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন গবেষকরা। ২০০৪ সালে
পরিবেশ রক্ষার আন্তর্জাতিক সংগঠন- আইউসিএন এর লাল তালিকায় এখানকার অতিবিপন্ন ৩টি
এবং বিপন্ন প্রজাতির ২৭টি উদ্ভিদের নাম রয়েছে।
অদ্ভুত আকৃতির উদ্ভিদ ছাড়াও মোট ৩১ প্রজাতির প্রানীর দেখা মিলবে এই দ্বীপে।
যার ৯৪ শতাংশ অথাৎ ২৯টি প্রজাতিই স্থানীয়, অর্থাত যেগুলো আপনি পৃথিবীর অন্য কোথাও
দেখবেন না। পাখির মধ্যে রয়েছে সুকাত্রা স্টার্লিং, সুকাত্রা স্প্যারো, সুকাত্রা
সানবার্ড, সুকাত্রা বান্টিংসহ বেশ কিছু স্থানীয় প্রজাতির পাখি। এছাড়া স্কিংস, পা-বিহীন
টিকটিকি, নানা প্রকারের মাকড়শা এবং তিন প্রকারের স্বাদু পানির কাকঁড়া দেখতে পাওয়া
যায় এখানে। তাছাড়া দেখা মিলবে বেশ কয়েক ধরণের প্রজাপতিরও। তবে স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী
হিসেবে বাদুড় ছাড়া আর কোন প্রাণীর পাওয়া যায় না এখানে। তবে গবেষকদের
মতে, ২ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এখানে মানুষের বসবাসের ফলে স্থানীয় পরিবেশে পড়েছে
বিরুপ প্রভাব। বিলুপ্ত হয়ে গেছে কুমির বা মহিষের মতো অনেক প্রাণী। জ্বালানির প্রয়োজনে
উজার করা হয়েছে অনেক উদ্ভিদ। এছাড়া দ্বীপটিতে ছাগলসহ অন্যান গৃহপালিত প্রাণির আগমন
ঘটায় স্থানীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলও পড়েছে হুমকির মুখে।
সুকাত্রা দ্বীপের বেশিরভাগ বাসিন্দাই আল মাহরাহ নামে দক্ষিণ আরবের একটি
উপজাতির বংশোদ্ভুত। এছাড়াও এখানে খুব অল্প সংখ্যক সোমালিয় বংশোদ্ভুত মানুষের বাস
রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানেরও বাস রয়েছে এখানে। সুকাত্রার মুল
ভূখন্ডে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের বাস রয়েছে। অবশ্য এদের বেশিরভাগই বাস করেন
দ্বীপটির উত্তর উপকূলে। বাসিন্দারা মাছ শিকার, পশুপালন আর খেজুর চাষ করে জীবিকা
নির্বাহ করেন। দ্বীপের প্রধান রফতানি পন্য হল খেজুর, ঘি, তামাক আর মাছ। ইতিহাস
থেকে জানা যায়, প্রথম শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দ্বীপটিতে স্থানীয় ধর্ম প্রচলিত
ছিলো। এরপর থমাস দ্যা অপস্টল নামের এক খ্রিস্ট ধর্মপ্রচারক জাহাজডুবির ফলে
সুকাত্রায় আশ্রয় নেন এবং বহু বাসিন্দাকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষা দেন। দশম শতাব্দীতে
আরব ভুগোলবিদ আবু মুহাম্মদ আল হাসান আর হামদানীর দেয়া তথ্যানুসারে দ্বীপের
বেশিরভাগ মানুষ ছিলো খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। এমনকি, দ্য ট্র্যাভেলস অভ মার্কো পোলে
বইতেও সুকাত্রা দ্বীপের উল্লেখ আছে। যদিও মার্কো পোলো দ্বীপের কাছাকাছি কখনোও
যাননি তবে তার দেয়া তথ্যে দ্বীপবাসীরা ব্যাপ্টিষ্ট খ্রিষ্টান বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু
১৬ শতকে পূর্ব ইয়েমেনের মাহরার সুলতান দ্বীপটি দখলে নেয়ার পর থেকে দ্বীপের
বেশিরভাগ বাসিন্দাই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। বর্তমানে দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাই মুসলিম।
খ্রিস্ট ধর্মের চিহ্ন হিসেবে রয়েছে কিছু চার্চের ধ্বংসাবশেষ এবং কবরফলক।
এত বিস্ময়ভরা দ্বীপটি সম্পর্কে জানান পর অনেকের মনেই হয়তো কৌতুহল জেগেছে
কিভাবে যাবেন এই দ্বীপে? ১৯৯৯ সালে এই দ্বীপে একটি বিমানবন্দর স্থাপনের আগ পর্যন্ত
কার্গো জাহাজ ছাড়া দ্বীপে পৌছানোর আর কোনো মাধ্যম ছিলো না। তবে বর্তমানে বিমানযোগে
সহজেই যাওয়া যাবে দ্বীপটিতে। তবে দ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে
এপ্রিল মাস। বছরের অন্য সময়ে ভারী বৃস্টিপাতের কারণে ভ্রমণ বিঘ্নিত হবে। পর্যটকদের
জন্য এখানে কয়েকটি গেষ্ট হাউজ থাকলেও উন্নত মানের কোন হোটেল এখনো গড়ে উঠেনি। এই
এলাকার ইকোসিস্টেমের কারণে এখানে রাস্তা বা গণপরিবহনের সংখ্যাও খুবই কম। এখানে
ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হবার আশংকা থেকেই পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট নির্মাণ করা
হয়নি। যে কারণে মাঝে মধ্যে রাস্তায় দু-একটা মিনিবাসের দেখা মিলতে পারে। চাইলে ফোর
হুইলার ড্রাইভ ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন দ্বীপের এখানে সেখানে। তবে পায়ে হেটে দ্বীপটি
ঘুরে দেখাই যে সবচেয়ে উত্তম এবং আকর্ষণীয় হবে, তাতে কোনো সন্দেহই নেই।